আমরা সবাই এক সুবিশাল জীবন্ত লাইব্রেরি। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে রয়েছে স্মৃতি, ঘটনা, গল্প, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, সংগ্রাম, ভালোবাসা, অর্জন, ব্যর্থতা, স্বপ্ন ও কোটি কোটি তথ্যের বিপুল ভাণ্ডার। সেই অসাধারণ তথ্যগুলো আমরা নানান কারণেই লিখতে পারি না। manush.me’র মাধ্যমে অনলাইনে খুব সহজেই সবার জীবনী লিখে ও রেকর্ড করে সংরক্ষণ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু যারা অনলাইনে লিখতে অভ্যস্থ নন, তারা কেন এই সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন? তাদের কথা ভেবেই আমরা তৈরি করেছি জীবনী লেখার সহায়ক গ্রন্থ ‘জীবনীনামা’।
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটি কী?
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটি হলো মানুষের জীবনী সহজভাবে লিখে রাখার জন্য চমৎকার একটি সহায়ক গাইড-বুক। এটি সাধারণ কোনো গ্রন্থ নয়। ভালো জীবনী লেখার জন্য চিন্তাশীল, অর্থবহ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহে সাজানো একটি সহজ রোডম্যাপ। যে রোডম্যাপটি ব্যবহার করলে যে কেউ তার জীবন নিয়ে ভাবতে পারবে, স্মৃতিগুলো খুঁজে পাবে, গল্পগুলো মনে পড়বে এবং ধারাবাহিকভাবে নিজ হাতে জীবনী লিখতে পারবেন।
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটিতে ধাপে ধাপে জীবনের অধ্যায়গুলো সাজানো রয়েছে। জন্ম থেকে শুরু করে পরিবার, শৈশব, কৈশোর, শিক্ষা, কর্মজীবন, সম্পর্ক, ভালোবাসা, মূল্যবোধ, অর্জন, হতাশা, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন—সবকিছু নিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রশ্নপত্র। প্রতিটি প্রশ্ন পড়ার পর মনে না থাকা স্মৃতিগুলোকে আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে। প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য রয়েছে ডায়েরির মতো ফাঁকা পৃষ্ঠা।
অনলাইনে লিখতে না পারলেও জীবনী লেখা সম্ভব
অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটার বা মোবাইলে দীর্ঘ লেখা লিখতে অভ্যস্ত নন। আবার অনেকেই ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। সেই ভাবনা থেকেই ‘manush.me’ প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটি তৈরি করা হয়েছে। গ্রন্থটি হাতে নিলেই আপনি বুঝবেন—জীবনী লেখা আসলে কতটা সহজ!
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটি যেভাবে ব্যবহার করবেন
১. গ্রন্থটির প্রচ্ছদে বা মলাটে আপনার নাম লেখার জায়গা রয়েছে। সেখানে সুন্দরভাবে আপনার নামটি লিখুন। মোটা কালির কলম দিয়ে লিখলে সবচেয়ে ভালো। নাম লেখার পর গ্রন্থটির দিকে তাকালে মনে হবে, এটি আপনারই আত্মজীবনী গ্রন্থ।
২. গ্রন্থটির শুরুতে আপনি কে, কেন আপনি সেরা, আপনার মস্তৃষ্কের ধারণ ক্ষমতা, নিজেকে চেনার উপায় অর্থাৎ মানুষ হিসেবে আপনার পরিচয় জেনে নিন।
৩. নিজের সাধারণ তথ্য, শিক্ষা ও পেশা, শখ ও আগ্রহ, ব্যক্তিগত বিবরণ, জীবন সম্পর্কে দর্শন, যোগাযোগের তথ্য, বংশ পরিচিতি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি পরিচিতি ফরমটি পূরণ করুন। এটি শুধু জীবনের সূচনা নয়, বরং এটি আপনার পারিবারিক ইতিহাস সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে, তাদের শিকড় কোথায়।
৪. সূচিপত্রের জায়গাটিতে রয়েছে অধ্যায় ও প্রশ্ন। প্রশ্নগুলো পাশে পৃষ্ঠা নং বসানোর জায়গা রয়েছে। কোন প্রশ্নের উত্তর কোন পৃষ্ঠায় লিখেছেন তা আপনি নিজেই পৃষ্ঠা নং এর ফাঁকা জায়গায় বসাতে পারবেন। ফলে গ্রন্থটি পুরোপুরি লেখা শেষে খুব সহজেই যেকোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা যাবে।
৫. অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য ফাঁকা পৃষ্ঠা রয়েছে। পৃষ্ঠাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখুন। প্রতিটি ফাঁকা পৃষ্ঠার উপরে শিরোনাম ও পৃষ্ঠা নং বসানোর জায়গা রয়েছে। উত্তর লেখার সময় শিরোনাম এ প্রশ্নটি লিখুন এবং পৃষ্ঠা নং বসান।
৬. জীবনী মানেই সাহিত্যের ভাষায় তৈরি করা নয়। আপনি যেভাবে কথা বলেন, সেভাবে লিখুন। এতে জীবনী আরও প্রাণবন্ত ও বাস্তব হয়ে উঠবে। কারণ স্মৃতি যখন নিজের মতো করে উঠে আসে, তখন তা অন্যের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
৭. জীবনী তৈরি করা কোনো প্রতিযোগিতা নয়। এটি আপনার জীবনের গল্প, তাই ধীরে ধীরে লিখুন। প্রতিদিন একটু একটু করে তৈরি করুন, সময় নিয়ে সাজান। একটি ভালো জীবনী তৈরি করতে সময়ের প্রয়োজন হয়, কারণ এখানে উঠে আসে— আত্মবিশ্লেষণ, আবেগ, বোধ, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি।
৮. অনেক সময় আমরা নিজের জীবনের কিছু ঘটনা ভুলে যাই, কিন্তু কাছের মানুষদের মনে থাকে। পরিবারের সদস্য বা পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করুন। তারা আপনাকে অতীতের মূল্যবান মুহূর্তগুলো মনে করিয়ে দিতে পারে।
৯. ভুলের ভয় করবেন না। ভুল বানান, বাক্যগঠন বা ভাষা নিয়ে চিন্তা করবেন না। এটি কোনো পরীক্ষার খাতা নয়। এটি আপনার ব্যক্তিগত জীবনী, আপনার মতো করে তৈরি করুন।
১০. লেখার পর গ্রন্থটি যত্ন করে সংরক্ষণ করুন। আপনার জীবনী শুধু আপনার জন্য নয়- এটি আপনার সন্তান, নাতি-নাতনি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। তাই বইটি লেখা শেষে ভালোভাবে মোড়ানো অবস্থায় একটি নিরাপদ ও শুষ্ক স্থানে রাখুন। এটি আপনার জীবনভিত্তিক উপহার, যা আপনার চলে যাওয়ার পরও বংশধরদের কাছে থেকে যাবে এবং তারা জানতে পারবে, আপনি কে ছিলেন, কীভাবে জীবন কাটিয়েছেন এবং আপনার অভিজ্ঞতা থেকে তারা কী শিখতে পারে।
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটি ব্যবহার করে জীবনী লেখার সুবিধা
১. সহজ প্রশ্নে জীবনের গভীরে যাওয়া: যাদের লেখার অভ্যাস নেই, তারাও এই গ্রন্থের প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে নিজের জীবন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারবেন।
২. কোনো প্রযুক্তিগত জটিলতা নেই: ইন্টারনেট নেই, বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেই—তবুও আপনি লিখতে পারবেন। নিজের পছন্দের জায়গায় বসে, একদম হাতে-কলমে।
৩. হাতের লেখা সংরক্ষণ হবে: ‘জীবনীনামা’ গ্রন্থে শুধু শব্দ নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে আপনার হাতের ছোঁয়া, আপনার নিজস্ব স্টাইল। হাতে লেখা জীবনী হয়ে উঠবে ব্যক্তিগত, অন্তরঙ্গ এবং স্মরণীয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু আপনার লেখা পড়বে না, আপনার হাতের লেখা দেখে আপনাকে আরও গভীরভাবে অনুভব করবে এবং স্মৃতিকাতর হবে।
৪. সারাজীবন ধরে সংরক্ষণযোগ্য: অন্যান্য বই বা খাতার মতোই এটি থাকবে আপনার বাসায়। আপনার সন্তানেরা, নাতি-নাতনিরা একদিন এই বই পড়ে আপনাকে নতুন করে চিনবে ।
৫. পারিবারিক ঐতিহ্য তৈরি হবে: ‘জীবনীনামা’ শুধু একজন মানুষের নয়, পুরো পরিবারের ঐতিহ্য। একদিন এই গ্রন্থ ঘুরে বেড়াবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
৬. মনের আরাম ও আত্মবিশ্বাসের উৎস: ‘জীবনীনামা’ লেখার মাধ্যমে নিজের জীবন ফিরে দেখা যাবে। নিজেকে কাগজ-কলমে তুলে ধরার আনন্দ—এক অসাধারণ মানসিক শান্তি এনে দেবে।
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটি কাদের জন্য?
১. আপনার বাবা-মা, যাঁরা অনলাইনে লেখেন না।
২. আপনার দাদু-নানু, যাঁদের জীবনের গল্প আপনি জানতে চান, হারাতে চান না।
৩. আপনি নিজে, যদি আপনি নিজের হাতে লেখা জীবনী সংরক্ষণ করতে চান।
৪. যেকোনো মানুষ, যারা চায় তাদের জীবনের স্মৃতি, ঘটনা, গল্প, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, সংগ্রাম, ভালোবাসা, অর্জন, ব্যর্থতা, স্বপ্ন ও মূল্যবোধ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানুক।
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটি আপনার জন্য একটি চমৎকার সুযোগ, যেখানে আপনি শুধু নিজের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছেন এক মূল্যবান সম্পদ। আজই বইটি সংগ্রহ করুন, নিজের জীবনের গল্প লেখা শুরু করুন।
‘জীবনীনামা’ গ্রন্থটির অর্ডার লিংক: