জীবনী তৈরি করা শুধুমাত্র নিজের গল্প বলা নয়। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, সংগ্রাম, অর্জন ও আবেগগুলোকে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে যাওয়া। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি হবে একটি আয়না, যেখানে তারা দেখতে পাবে আপনি কে ছিলেন, কেমন ছিলেন এবং কীভাবে জীবনের প্রতিটি ধাপ পার করেছেন। অনেকেই মনে করেন, জীবনী লেখার জন্য সাহিত্য জানা বা লেখকসুলভ ভাষা থাকা জরুরি। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। জীবনী তৈরি করা মানে হচ্ছে নিজের ভাষায়, নিজের মতো করে জীবনকে তুলে ধরা।
ধাপে ধাপে জীবনী তৈরির উপায়
১. ব্যক্তিগত পরিচিতি ফরম পূরণ করুন
প্রথমেই নিজের ছবি, নাম, জন্মস্থান, জন্মতারিখ, প্রিয় বিষয় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি পরিচিতি ফরমটি পূরণ করুন। এটি শুধু জীবনের সূচনা নয়, বরং এটি আপনার পারিবারিক ইতিহাস সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে, তাদের শিকড় কোথায়।
২. পরিচিতি কার্ড উপহার নিন
ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করার পর নান্দনিক একটি পরিচিতি কার্ড উপহার পাবেন। এই কার্ডটি আপনার স্যোশাল মিডিয়া একাউন্টে পোস্ট করে নিজেকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
৩. প্রশ্নের উত্তর দিন (অধ্যায়ভিত্তিক)
এখানে জীবনকে ২৬টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক ও চিন্তাশীল প্রশ্ন। প্রায় ১২০০+ প্রশ্ন এখানে রয়েছে। আপনি চাইলে প্রশ্নোত্তর লিখে বা ভয়েস রেকর্ড করে উত্তর দিতে পারেন। এই প্রশ্নগুলো আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেবে।
৪. নিজের ভাষায় তৈরি করুন
জীবনী মানেই সাহিত্যিক ভাষায় তৈরি করা নয়। আপনি যেভাবে কথা বলেন, সেভাবে লিখুন। এতে জীবনী আরও প্রাণবন্ত ও বাস্তব হয়ে উঠবে। কারণ স্মৃতি যখন নিজের মতো করে উঠে আসে, তখন তা অন্যের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
৫. তাড়াহুড়ো নয়, সময় নিন
জীবনী তৈরি করা কোনো প্রতিযোগিতা নয়। এটি আপনার জীবনের গল্প, তাই ধীরে ধীরে তৈরি করুন। প্রতিদিন একটু একটু করে তৈরি করুন, সময় নিয়ে সাজান। একটি ভালো জীবনী তৈরি করতে সময়ের প্রয়োজন হয়, কারণ এখানে উঠে আসে— আত্মবিশ্লেষণ, আবেগ, বোধ, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি।
৬. পরিবার ও বন্ধুদের যুক্ত করুন
অনেক সময় আমরা নিজের জীবনের কিছু ঘটনা ভুলে যাই, কিন্তু কাছের মানুষদের মনে থাকে। পরিবারের সদস্য বা পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করুন। তারা আপনাকে অতীতের মূল্যবান মুহূর্তগুলো মনে করিয়ে দিতে পারে।
৭. ভুলের ভয় করবেন না
ভুল বানান, বাক্যগঠন বা ভাষা নিয়ে চিন্তা করবেন না। এটি কোনো পরীক্ষার খাতা নয়। এটি আপনার ব্যক্তিগত জীবনী, আপনার মতো করে তৈরি করুন।
৮. লেখা শেষে বই তৈরি করুন
পুরো জীবনী লেখা শেষে এক ক্লিকেই পিডিএফ বই তৈরি করতে পারবেন। পিডিএফ বইটি প্রিন্ট করে সারাজীবনের জন্য নিজের কাছে রাখতে পারবেন এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে উপহার দিতে পারবেন। বিভিন্ন ই-বুক প্লাটফর্মে পিডিএফ বইটি ই-বুক আকারেও বিক্রি করতে পারবেন। আপনি চাইলে আমাদের মাধ্যমে প্রচলিত প্রফেশনাল বইও তৈরি করতে পারবেন। আমাদের ‘পিন্ট অন ডিমান্ড’ সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার বইটি যত খুশি তত কপি ছাপাতে পারবেন।
ভালো জীবনী তৈরি করার কৌশল
১. সত্যনিষ্ঠতা বজায় রাখুন
আপনার জীবনী যেন সত্যিকারের গল্প হয়। অতিরঞ্জন বা সাজানো গল্প না লিখে সৎভাবে জীবনের সত্য ঘটনাগুলো তুলে ধরুন। আপনি যেমন ছিলেন, ঠিক তেমন করেই নিজেকে তুলে ধরলে পাঠকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
২. যাছাই করুন
পুরোনো তারিখ, স্থান, মানুষের নাম বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে ভুল এড়াতে তথ্য যাচাই করে নিন। প্রয়োজনে ডায়েরি, পুরোনো ছবি বা কাগজপত্র ঘেঁটে নিতে পারেন।
৩. নাটকীয় উপস্থাপন করুন
ঘটনাগুলোকে গল্প বলার স্টাইলে উপস্থাপন করুন। যেন পাঠক সেই সময়টাকে অনুভব করতে পারেন। উত্তেজনা, আবেগ, ক্লাইম্যাক্স—এসব মিশিয়ে জীবনীকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলুন।
৪. ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করুন
শুধু ঘটনা নয়—ঘটনার পেছনে থাকা আপনার অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিক দ্বন্দ্বও তুলে ধরুন। আপনি কীভাবে চিন্তা করতেন, কেন কোনো সিদ্ধান্ত নিলেন—এসবই জীবনীকে গভীর করে তুলবে।
জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু লেখা অমর। আপনার জীবনী ভবিষ্যতের জন্য হয়ে উঠতে পারে অনুপ্রেরণা। তাই এখনই শুরু করুন। পৃথিবীতে আপনার মতো গল্প আর কারও নেই। তাই সময় নিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, সত্যনিষ্ঠভাবে নিজের জীবনী তৈরি করুন।